ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

ভোটের হাওয়া (কক্সবাজার ১) চকরিয়া-পেকুয়ায় আওয়ামীলীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি, সুবিধায় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::

একাদশ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের মাঠে লড়তে প্রস্তুত রাজনৈতিক দলগুলো। চলছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। দলীয় মনোনয়নের আশায় মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা। কক্সবাজার জেলার ৪টি আসনের মধ্যে কক্সবাজার-১ হচ্ছে চকরিয়া-পেকুয়া আসন। এ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টি (এরশাদ) সমর্থিত হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াছ। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু গত প্রায় ৪ বছরে তিনি তার সমর্থন বা বলয় গড়ে তুলতে পারেননি। তাই আগামীতে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে তিনি মনোনয়ন পেলেও বিশেষ একটা সুবিধা করতে পারবেন না। এমনটাই জানালেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।
চকরিয়া-পেকুয়া আসনটি বরাবরই বিএনপি-জামায়াতের। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের টিকিটে একবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম। এরপর থেকে আসনটি জামায়াত ও বিএনপি’র দখলে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর পেকুয়ার অবকাঠামোগত অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। মন্ত্রিত্বের স্বাদ পেয়েছেন পেকুয়ার সন্তান বিএনপি সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ও বর্তমান কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন আহমদ। এরপর থেকে তিনি কিংবা তার পরিবারের জন্যই এ আসনের বিএনপি’র প্রার্থিতা নিশ্চিত হয়ে আছে। ওয়ান-ইলেভেনের পর স্বামী কারান্তরীণ থাকলেও স্ত্রী হাসিনা আহমদই বিএনপি’র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সালাহউদ্দিন আহমদ বর্তমানে ভারতের শিলংয়ে সেখানকার সরকারের নজরবন্দি থাকলেও কক্সবাজারের বিএনপি’র দলীয় রাজনীতি তারই ইশারায় পরিচালিত হচ্ছে বলে নেতা-কর্মীদের অভিমত। তাদের মতে, মন্ত্রী পরিবারের কেউ যদি নির্বাচনে অংশ না নেন তবে তাঁর ইশারা যার উপর পড়বে তিনিই নির্বাচনের মাঠে লড়বেন। আর তৃণমূল থেকে যদি কারো নাম প্রস্তাব করতে বলা হয় তবে পরিচ্ছন্ন ইমেজের কারণে পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজুর নাম প্রস্তাব করা হতে পারে বলে সূত্রের অভিমত। ব্যক্তিগত ইমেজ ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি মাহমুদুল হক চৌধুরীর ছেলে হিসেবে নির্বাচনী মাঠে তিনি বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন। তবে মনোনয়ন বিষয়ে সালাহউদ্দিনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে উল্লেখ করেন সূত্রটি।
অপরদিকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে কক্সবাজার অবকাঠামোগতভাবে অবেহেলিত থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দু’সময়ে অভূতপূর্ব উন্নয়ন যজ্ঞ চলছে কক্সবাজারে। চলমান এসব কাজ নির্বিঘ্নে বাস্তবায়ন করতে ভূমিকা থাকবে সংসদ সদস্যের। এ কারণে দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসুক সেটাই চাইছে আওয়ামী লীগ। সেভাবেই প্রার্থী মনোনয়ন দিতে খোঁজ নিচ্ছেন দলের সংসদীয় বোর্ড।
কক্সবাজার-১ আসন থেকে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের আশায় মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি, বর্তমান চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম এমএ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাশেদুল ইসলাম।
এদের মাঝে সালাউদ্দিন আহমদ সিআইপি অতীতে একাধিকবার দলীয় টিকেট পেয়েও প্রতিবারই হেরেছেন। জাফর আলম এমএ অতীতে বার বার দলীয় টিকেট দাবি করে বঞ্চিত হলেও চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র হিসেবে বিজয়ী হন। গত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এখনো দায়িত্ব পালন করছেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কৃষক নেতা রেজাউল করিম সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদ পাওয়ার পর দলীয় ও সামাজিক প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এদের মাঝে তরুণ হিসেবে মাঠে রয়েছেন এ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা গভর্নর এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর হিসেবে পরিচিত এডভোকেট জহিরুল ইসলামের ছেলে রাশেদুল ইসলাম। তিনি এর আগে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসন থেকে ৯ম সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তৃণমূলের ভাষ্য পিতার রাজনৈতিক প্রাজ্ঞতা ও নিজের কর্মকাণ্ডে চকরিয়া-পেকুয়াসহ পুরো জেলায় একটি ভাল ইমেজ রয়েছে রাশেদুল ইসলামের। একে পুঁজি করে তিনিও এলাকার রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আর এতে নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত।
মমতাজ আহমদ, জালাল উদ্দিন ও কফিল উদ্দিন বাহাদুর নামে তিন ভোটার বলেন, চকরিয়া-পেকুয়ায় বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পেকুয়ায় সাব-মেরিন ল্যান্ডিং স্টেশনসহ শত কোটি টাকার স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণযজ্ঞ চলছে। চলছে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন কাজও। এসব তৃণমূলে তুলে ধরে ত্যাগী ও সৎ তারুণ্য নির্ভর জনবান্ধব কাউকে প্রার্থী করা হলে নৌকার প্রার্থী জয় পেতে পারেন। জনবান্ধব প্রার্থী না হলে বিএনপি’র কাছ থেকে সিটটি পুনঃরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না বলেও মনে করেন তারা।

পাঠকের মতামত: